কিভাবে স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করবেন? ইনভেস্টমেন্ট গাইড

একটি যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে বিনিয়োগের (Financial Investment) চেষ্টা করা খুবই আনন্দের বিষয়। আপনি একটি পরিকল্পনা করার আগে, আপনি যা করতে চান তা করার ইচ্ছা থাকতে হবে। আপনি কত টাকার মালিক হতে চান তা সিদ্ধান্ত নিন। যেমন আপনি অবসর গ্রহণের পর, আপনার নিজের বিলাসবহুল বাড়িতে বাড়ি যেতে চান বা বিদেশে ভ্রমণ করতে চান ইত্যাদি। তাহলে আজ থেকেই সঠিক বিনিয়োগের (Business Investment) ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিন।

শেয়ার মার্কেট (Dhaka Stock Exchange) বিনিয়োগ আপনাকে ধনী করে তুলবে কথাটা কতটুকু সত্য! এখন আপনি আমাকে বলতে পারেন নতুন জুয়াড়ির আবির্ভাব ঘটেছে। তার প্রধান এবং একমাত্র কারণ হল বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে (Share Bazar) বিনিয়োগ করতে গিয়ে বিনিয়োগকারীরা রক্তাক্ত হয়েছে। আজকে আমি আলোচনা করব কিভাবে আপনি বিনিয়োগের মাধ্যমে ধনী হতে পারেন।

মনে রাখবেন আপনি যদি সফলতা অর্জন করতে ব্যর্থ হন তাহলে আপনার ব্যর্থতা দেখার জন্য সবাই পপকর্ন নিয়ে বসবে
— Biniogkari.com, Stock Market Investment
how to invest in stock market

কীভাবে আর্থিক ভাবে মুক্তি পাবেন?

টাকা (Currency) দুটি বর্ণের খুবই ছোট একটি শব্দ কিন্তু তার ব্যবহার আমাদের জীবনে অপরিসীম। জীবনে চলার পথে দুই ধরনের মানুষ দেখা যায়। প্রথম: প্রকার মানুষ হলেন যার টাকা (Money) আছে কিন্তু জ্ঞান নেই তার মানে হল তারা টাকা দিয়ে জ্ঞান অর্জন করে। দ্বিতীয়: দলের মানুষ হলেন যাদের টাকা নেই কিন্তু জ্ঞান আছে তার মানে হল তারা জ্ঞান বিক্রি করে তারা টাকা উপার্জন করে।

বাংলাদেশ তার দারিদ্র্যের হার হ্রাসে অভূতপূর্ব অগ্রগতি করেছে এবং বিশ্বব্যাংকের (World Bank) তথ্য মতে, ২০২০-২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে দারিদ্র্য শব্দটি দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

একটি জরিপে (The Spectator Index) দেখা গেছে, বিশ্বের চূড়ান্ত দেশের তালিকার মধ্যে সর্বাধিক দারিদ্র্যের (Bangladesh: 2.3 %) বসবাসকারী লোকেদের মধ্যে (World Poverty Clock) ষষ্ঠ তম বাংলাদেশ। আপনি যদি ভেবে থাকেন দেশের সরকার জনগণের জন্য কাজ করবে যার ফলশ্রুতিতে মানুষের জীবনযাত্রা মান অথবা আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে।

তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন! মনে রাখবেন, বাংলাদেশের সরকার (Bangladesh Government) ভোট চাওয়া ব্যতীত আপনার কোন উপকারে আসবে না। আপনার আর্থিক অবস্থা উন্নতি করার জন্য আপনাকে নিজেকেই প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

খরচের পর যা অবশিষ্ট থাকে সেটা সঞ্চয় না করে বরং সঞ্চয়ের পর যা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে খরচ করো
— ওয়ারেন বাফেট, Stock Market Investment

নিষ্ঠুর আর্থিক পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবেন? [Financial Investment]

আমাদের এই দরিদ্র দেশে অনেকেই রয়েছি যারা অবসর গ্রহণের পরে আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হয়। যা আমাদের অপ্রত্যাশিত পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার সম্মখিন হতে হয়। যদি আমরা এই নিষ্ঠুর আর্থিক ( Financial Harassment) পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে চাই তবে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, কিভাবে আমাদের জীবনে আর্থিক স্বচ্ছলতা (Financial Solvency) আনা যায়? কিভাবে আমরা আজ থেকে ২৫-৩০ বছর বয়সের পর আমাদের পরিবার অথবা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আর্থিক মুক্তি আসা করতে পারি?

আমরা কি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ হতে পারি? আমাদের জন্য কোন পথটি সঠিক ? উত্তরগুলো খুবই সহজ। আসুন, একটু মনোযোগ সহকারে জানা যাক। মনে করি, আপনার বর্তমান বয়স ৩০ বছর আপনি আপনার পরিবারের জন্য ৬০ বছর বয়সের পরে সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আর্থিক ভাবে সুখী হতে চাচ্ছেন। আপনাকে একটি সহজ উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি।

আমি ১১ বছর বয়সে প্রথম বিনিয়োগ করি, তার আগ পর্যন্ত আমি শুধু সময় নষ্ট করেছি
— ওয়ারেন বাফেট, Stock Market Investment

হিসাব পদ্ধতি

ধরে নিচ্ছি আপনি কোন একটি কোম্পানিতে (Private Company) চাকরি করছেন এবং আপনার বর্তমান বয়স ৩৫ বছর এবং আপনি উক্ত কোম্পানি থেকে প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা ( এখানে আমি সর্ব নিম্ন ধরে হিসেব করছি আপনি চাইলে আপনার আর্থিক অবস্থা অনুসারে আরও বেশি করে ধরে নিতে পারবেন) টাকা করে উপার্জন করছেন। আপনার এই উপার্জনটা খুবই সামান্য। যাই হোক, প্রতি বছর আপনি ৬০,০০০ টাকা উপার্জন করছেন।

ধরে নিচ্ছি , আপনি ৬০ বছর বয়সের পর অবসর গ্রহণ করবেন। আমরা জানি, একজন মানুষের গড় প্রতি আয়ু ৬০(+-) বছর বয়স হয়ে থাকে। তাহলে ২৫-৩০ বছর বয়সের সময় মধ্যে আপনি আপনার জীবনটাকে সম্পূর্ণ রূপে আর্থিক স্বাধীনতা দিতে চান তাহলে,বর্তমান আয় (প্রতি মাসে ) : ৫,০০০ টাকা (৫,০০০ টাকা X ১২ মাস = ৬০,০০০ টাকা ) তাহলে, আমাদের আর্থিক ব্যয় কাটানোর জন্য কমপক্ষে বর্তমান আয়ের ৭০ শতাংশ প্রয়োজন।

যদি আমরা ২৫ - ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত বেচে থাকতে পারি। আপনার প্রয়োজন (৭০% X ৬০,০০০) এক বছরে X ৩০বছর = ১২,৬০,০০০ টাকা । তাহলে আমরা পাই ১২,৬০,০০০ টাকা । মুদ্রাস্ফীতির জন্য, আপনার পরিমাণ ২.৫ গুন দরকার তাহলে আমরা পাই ১২,৬০,০০০ টাকা X ২.৫ = ৩১,৫০,০০০ টাকা !! এখানে একটু বলে নেয়া ভালো, একটা সময় ছিল যখন আমরা সিনেমা দেখার জন্য টিকিট কিনতাম, তখন টিকিটের দাম ছিল ৫০০ টাকা এবং এখন দাম ১০০০+, তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি যে টিকিটের দাম ( মুদ্রাস্ফীতি ) ২ গুণ বেড়েছে।

২৫ - ৩০ বছর বয়সের পর আর্থিক ভাবে স্বাচ্ছন্দ্য বোধের জন্য আমরা ৩১,৫০,০০০ টাকা অর্জন করব শুধুমাত্র প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা (সাধারণ ও সর্বনিম্ন) উপার্জনের মাধ্যমে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য!! এটা সম্ভব।

কখনোই আয়ের একমাত্র উৎসের উপর নির্ভর করবেন না। বিনিয়োগের মাধ্যমে আরেকটি উৎস তৈরী করুন
— ওয়ারেন বাফেট, Stock Market Investment

কিভাবে শেয়ার (Share) বাজার থেকে অর্থ উপার্জন করবেন?

এখন আসুন আপনি কীভাবে শেয়ার বাজার (Share Bazar) থেকে আরও বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। আমি এখানে সর্বনিম্ন অতি সাধারন একজন ব্যক্তি হিসাবে প্রতি মাসে উপার্জন ধরে এই টাকার পরিমানটি বের করেছি।

আপনার আপনাদের সুবিধা মত প্রতি মাসে অর্জিত উপার্জন যুক্ত করে হিসাব করতে পারেন। আপনাকে আর্থিকভাবে সুরক্ষিত ও মুক্ত হওয়ার জন্য অবশ্যই বিনিয়োগ করতে হবে। এখন কিভাবে শেয়ার বাজার থেকে আপনি আর্থিকভাবে সচ্ছলতা অর্জন করতে পারবেন তার একটি উদাহরণ দেখাব

যদি তুমি আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পার, তবে আর্থিক অবস্থাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না
— ওয়ারেন বাফেট, Stock Market Investment

কিভাবে শেয়ার বাজার থেকে অর্থ উপার্জন করবেন?

শেয়ার বাজারে (Dhaka Stock Market) বিনিয়োগের মাধ্যমে রিটার্ন শতকরা হার প্রতি বছর নয় হাজার টাকা (১৫%) করে জমা করলে শতকরা হার (%) টাকা প্রথম হিসাবটি অর্জিত অর্থের পরিমাণ (কেবল আমানত) ০% ২,৩৪,০০০ দ্বিতীয় হিসাবটি অর্জিত অর্থের পরিমাণ (শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে রিটার্ন - সহজ) ১১ % ২৫,৩৪,১১৯ তৃতীয় হিসাবটি অর্জিত অর্থের পরিমাণ (শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে রিটার্ন - মধ্যম ) ১৫ % ২৫,৩৪,১১৯

চতুর্থ হিসাবটি অর্জিত অর্থের পরিমাণ ( শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে রিটার্ন - শুধু মাত্র অভিজ্ঞদের জন্য ) ২০ % ৬১,২৭,৬৭৪ এখন চতুর্থ হিসাবটি (২০% ) অর্জিত অর্থের পরিমাণ ৬১,২৭,৬৭৪ টাকা। ( শুধুমাত্র অভিজ্ঞদের জন্য ) উপরের উদাহরণ মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে আমরা শেয়ার বাজার থেকে কি পরিমান টাকা অর্জন করতে পারি।

প্রতি বছর নয় হাজার টাকা (১৫%) করে জমা করলে শতকরা হার (%) টাকা (Tk.)
প্রথম হিসাবটি অর্জিত অর্থের পরিমাণ (কেবল আমানত) ০ % ২,৩৪,০০০
দ্বিতীয় হিসাবটি অর্জিত অর্থের পরিমাণ (শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে রিটার্ন - সহজ) ১১ % ২৫,৩৪,১১৯
তৃতীয় হিসাবটি অর্জিত অর্থের পরিমাণ (শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে রিটার্ন - মধ্যম ) ১৫ % ২৫,৩৪,১১৯
চতুর্থ হিসাবটি অর্জিত অর্থের পরিমাণ ( শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে রিটার্ন - শুধু মাত্র অভিজ্ঞদের জন্য ) ২০ % ৬১,২৭,৬৭৪
অর্থ আপনার সিদ্ধান্ত আপনার
— বিনিয়োগকারী.কম, Stock Market Investment

সতর্কীকরণ

শেয়ার মার্কেট (Bangladesh Stock Exchange) ইনভেস্ট করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আপনারা যখন শেয়ার মার্কেটে লেনদেন করবেন, অন্যের কথায় প্রভাবিত না হয়ে ,নিজেদের বুদ্ধি অনুযায়ী এবং নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী বিনিয়োগ করবেন। আপনার কোনো আর্থিক ক্ষতির জন্য (বিনিয়োগকারী.কম) দায়ী থাকবে না। একটি কথা সবসময় মনে রাখবেন,

পুঁজিবাজারে (Pujibazar) বিনিয়োগকারীদের সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে,এক্ষেত্রে ফেসবুক এসএমএস কিংবা অন্য কোন অসমর্থিত সূত্র থেকে ভিত্তিতে বিনিয়োগ করা হলে বিনিয়োগকারীদের ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে তাই ফেসবুক এসএমএস কিংবা অন্য কোন অসমর্থিত সূত্র থেকে জড়ানো গুজবের ভিত্তিতে বিনিয়োগ না করে কোম্পানির এনালাইসিস এবং মৌল ভিত্তির উপর পর্যালোচনা করে বিনিয়োগ করতে হবে।

বিনিয়োগকারী.কম ওয়েব সাইটটিতে বর্ণিত তথ্যগুলো শুধুমাত্র ক্যাপিটাল মার্কেটে Capital Market গতিবিধি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা দেয়ার চেষ্টা করেছে।

শেষ কথা

বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২০২১ সালে হবে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। আইএমএফ এর বৈশ্বিক ইকোনোমিক আউটলুকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবুও, বাংলাদেশের আর্থিক খাত এখনও একটি নবজাতক পর্যায়ে রয়েছে।

আমরা যদি ভারতকে একটু নজর দেই তবে বুঝতে পারি যে আমরা কোথায় আছি। আইএমএফের সবশেষ অনুমান অনুযায়ী ২০২১ সালে ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। মনে রাখবেন, ❝ শেয়ার বাজারে কোন অভিভাবক নেই ❞ । কখনো অন্যের কথায় প্রভাবিত হয়ে শেয়ার মার্কেটে ঝাঁপ দিবেন না।

আপনার পা পানিতে ডুবিয়ে কখনোই নদীর গভীরতা মাপবেন না
— ওয়ারেন বাফেট, Stock Market Investment

এক নজরে দেখে নিন

মনের অজান্তে তৈরি হয়া কিছু প্রস্ন হ্যাঁ না
আমি টেকনিক্যাল এবং ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস বুঝি না আমার কি ক্যাপিটাল মার্কেট এ ইনভেস্ট করা উচিত ?
ব্রোকারেজ হাউজে কর্মরত কোন বড় ভাই অথবা অফিশিয়াল ট্টডার অথবা টেলিভিশন অথবা সোশ্যাল মিডিয়া কোথায় কোন স্টকে ইনভেস্ট করা উচিত ?
আমি নতুন পুঁজি বাজারে এসেছি আমার কি ডে ট্রেডিং(২ দিন )করা উচিত ?
শেয়ারের দাম কমে গেলে আমার কি স্টপ লস ব্যবহার করা উচিত ?
নতুন বিনিয়োগকারী পুঁজি বাজারে কি ওয়িক ট্রেডিং ( সপ্তাহ ) করা উচিত ?

আমি যতটুক জানি ততটুকু শেয়ার করার চেষ্টা করলাম আশা করছি আপনাদের ভালো লেগেছে। বিনিয়োগকারী.কম শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে গণসচেতনতা মুলক পোস্ট করার চেষ্টা করছি। শুধুমাত্র নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য। যারা শেয়ার (Share Market) মার্কেটে জুয়াড়ির মনোভাব নিয়ে বিশ্লেষণ করেন তাদের থেকে যত দূরে থাকবেন ততোই ভালো। একটি কথা সবসময় মনে রাখবেন ❝ অর্থ আপনার সিদ্ধান্ত আপনার ❞

গুগল প্লে স্টোর থেকে শেয়ার বাজার সম্পর্কে সেরা বিনিয়োগকারী.কম মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করুন বিনিয়োগকারী .কম বাংলাদেশে সর্বপ্রথম পুজিবাজার সম্পর্কিত একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট - আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন!বিনিয়োগকারী.কম এখন ইউটিউবে! নিয়মিত ক্যাপিটাল মার্কেট বিষয়ক ভিডিওগুলো পেতে Biniogkari ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন ! এই লিঙ্কে চলে যান